কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্ক ও আবেগ নিয়ে বাবা-মার করণীয়
“আমার মেয়েটা হঠাৎ করে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে…”
“ছেলেটা সারাক্ষণ ফোনে কী করে বুঝতে পারি না…”
বয়ঃসন্ধি বয়সে এমন পরিবর্তন দেখা যাওয়া খুব স্বাভাবিক।
এ সময়টায় কিশোর-কিশোরীদের মন হয়ে ওঠে নরম, আবেগপ্রবণ ও কৌতূহলী।
বন্ধুত্ব, ভালো লাগা, সম্পর্ক, ভালোবাসা—সবকিছু নিয়ে মনে তৈরি হয় নানা প্রশ্ন ও দ্বিধা।
এই লেখায় থাকছে—
✅ কেন এমন হয়
✅ কীভাবে সন্তানের পাশে দাঁড়ানো যায়
✅ কী বলবেন, আর কী বলবেন না
১. কেন কিশোর বয়সে আবেগ এত জটিল হয়?
বয়ঃসন্ধির সময় হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে শুধু শরীর নয়, মনের ভিতরেও চলতে থাকে এক অদৃশ্য আন্দোলন।
- নতুন বন্ধুদের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়
- অচেনা রকমের ভালো লাগা অনুভব করে
- একা থাকতে চায় বা হঠাৎ খিটখিটে হয়ে পড়ে
- বাবা-মার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়
– “বাচ্চা প্রেমে পড়েছে বুঝলে কী করবো?”
– “কিশোর বয়সে ভালো লাগা কি স্বাভাবিক?”
✅ উত্তর: হ্যাঁ, তবে এই সময়ে গঠনমূলক দিকনির্দেশনা সবচেয়ে জরুরি।
২. বাবা-মা কীভাবে পাশে থাকবেন?
শুরুতেই রাগ নয়, বোঝার চেষ্টা করুন।
আপনার সন্তান আপনাকে তার “সেফ জোন” ভাবলে তবেই সে নিজের সমস্যাগুলো শেয়ার করবে।
করণীয় বিষয়গুলো:
- তার অনুভূতি শুনুন, মূল্যায়ন করুন
- “বন্ধু কে?” জিজ্ঞেস করুন, তবে ভয় না দেখিয়ে
- তার প্রতি কটাক্ষ নয়, সহমর্মিতা দেখান
- নিজের কৈশোরের অভিজ্ঞতা গল্পের মতো বলুন
৩. প্রেমের অনুভব মানেই বিপদ নয়
প্রথম ভালো লাগা বা প্রেমের অনুভব যে থাকবে না—এমন আশা করাও ভুল।
তবে একে অস্বীকার না করে বরং বুঝিয়ে বলুন—
- কীভাবে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হয়
- সম্মান, সীমা ও সম্মতির গুরুত্ব কী
- মন ভাঙলে কাকে পাশে পাওয়া উচিত
এই সময়: “তুই এসব কী করছিস?” না বলে বলুন—
“তুই কেমন অনুভব করিস, সেটা বলতে পারিস আমাকে।”
৪. যদি সন্তানের আচরণে গোপনীয়তা বাড়ে?
✅ ফোন লুকানো, কথা গোপন রাখা, হঠাৎ মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া—
এগুলো দেখা গেলেই জেরা না করে পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে সে নিজেই আপনাকে বিশ্বাস করে।
শান্তভাবে বলুন:
– “তুই কিছু নিয়ে চিন্তিত নাকি?”
– “যদি কারও বিষয়ে কথা বলতে চাইস, আমি আছি।”
একটা প্রশ্নেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে আবার গড়ে উঠতেও পারে।
৫. শেখাবেন কীভাবে?
শেখাতে হবে:
- সম্মান ও সম্মতির মানে
- শরীর ও মনের সীমানা রক্ষা
- না বলতে পারার সাহস
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও আত্মসম্মান বজায় রাখা
সতর্ক হোন এই কথাগুলো থেকে:
- “এ বয়সে এসব কেন?”
- “তুই তো পড়াশোনার নামই ভুলে গেছিস”
- “ছেলেদের/মেয়েদের সাথে কথা বলবি না”
এই ধরণের কথায় সন্তান আরও গুটিয়ে যায়।
উপসংহার: বিশ্বাসই সম্পর্কের ভিত্তি
বয়ঃসন্ধির সময় কিশোর-কিশোরীদের আবেগ, সম্পর্ক ও প্রেমের অনুভব স্বাভাবিক।
আপনি যদি তার ভরসার মানুষ হন, সে নিজের ভুল বা দ্বিধা নিয়েও আপনার কাছেই ফিরবে।
প্রেম মানেই বিপদ নয়, কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি বা একাকীত্ব অনেক বড় সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
তাই— সন্তানকে বোঝান, না যে শুধু আপনি তার অভিভাবক, আপনি তার মানুষ।