আজল অর্থ হলো সহবাসের সময় স্ত্রীর বাইরে বীর্যপাত করা, যা জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি প্রাচীন পদ্ধতি। ইসলাম ধর্মে এটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমোদনযোগ্য। তবে অভাবের ভয়ে সন্তান নেওয়া বন্ধ করা অনুচিত, কারণ রিজিকের মালিক আল্লাহ। কুরআন ও হাদীস উভয়েই এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে।
আজল কী?
আজল একটি প্রাচীন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেখানে সহবাসের চরম মুহূর্তে বীর্য স্ত্রীগাত্রের বাইরে নির্গত করা হয়। এটি সাময়িকভাবে গর্ভধারণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। ইসলামী শরীয়তে এটি কিছু শর্তে বৈধ, তবে এর উদ্দেশ্য ও পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামে আজলের বৈধতা:
ইসলামী শরীয়তে সন্তান ধারণের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়, তবে আজলসহ অন্যান্য অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করা বৈধ।
কুরআনের নির্দেশনা:
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না। তাদের ও তোমাদের রিজিকের দায়িত্ব আমিই নিয়েছি।”
(সূরা আল-ইসরা: ৩১)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, রিজিকের অভাবে সন্তান নেওয়া বন্ধ করা বা হত্যা করা ইসলামে নিন্দনীয়।
হাদীসের আলোকে আজল:
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত,
“আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগে আজল করতাম, অথচ কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল।”
(সহীহ বুখারী: ৫২০৮, সহীহ মুসলিম: ১৪৪০)
এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর অনুমোদনে সাহাবীগণ আজল করতেন। তবে এটি বাধ্যতামূলক ছিল না, বরং শর্তসাপেক্ষ।
আজল করার শর্তসমূহ:
- বৈধ উদ্দেশ্য: আজল করতে হবে বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্যে, যেমন:
- মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা।
- সন্তানদের মাঝে সময়ের ব্যবধান তৈরি করা।
- স্থায়ী না হওয়া: এটি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মতো হওয়া যাবে না।
আজল কেন অনুমোদিত?
ইসলামে আজল একটি সাময়িক পদ্ধতি, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গর্ভধারণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। এটি পরিবারে ভারসাম্য রক্ষা ও মা-বাবার দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর।
আজল ও আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
আজলের সাথে কনডম বা পিল ব্যবহারের মিল রয়েছে, কারণ এগুলোও সাময়িক গর্ভনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। তবে স্থায়ী পদ্ধতিগুলো ইসলামে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত।
প্রশ্ন-উত্তর সেকশন (FAQ):
- আজল কী?
আজল হলো সহবাসের সময় স্ত্রীর বাইরে বীর্যপাত করা। এটি একটি প্রাচীন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। - আজল ইসলামি শরীয়তে বৈধ কিনা?
হ্যাঁ, বৈধ, তবে এর উদ্দেশ্য ও পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। - কোন পরিস্থিতিতে আজল করা যায়?
যদি মাতৃস্বাস্থ্য বা সন্তানদের মধ্যবর্তী সময় ব্যবধান তৈরি করার প্রয়োজন হয়। - কুরআনে আজল সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
কুরআনে সরাসরি আজল উল্লেখ নেই, তবে সন্তানদের রিজিকের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করার কথা বলা হয়েছে। - হাদীসে আজল সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগে আজল করতেন এবং তিনি এতে নিষেধ করেননি। - আজল কি সম্পূর্ণ নিরাপদ?
না, এটি সম্পূর্ণ গর্ভনিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে না এবং ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে। - স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কি বৈধ?
না, স্থায়ী পদ্ধতিগুলো ইসলামে নিরুৎসাহিত। - আজলের বিকল্প কী হতে পারে?
অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেমন: কনডম, পিল। - আজল করলে কি সন্তান হতে পারে?
হ্যাঁ, ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে। - কনডম ব্যবহারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
যদি বৈধ উদ্দেশ্য থাকে, তবে কনডম ব্যবহার বৈধ।
সতর্কতা
আজল বা যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে বৈধতা ও স্বাস্থ্যগত বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলেম ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভুল উদ্দেশ্যে এসব পদ্ধতি ব্যবহার করা ইসলামে অনুচিত।