শিশুর ঘুম না হলে করণীয়

শিশুর ঘুম না হলে করণীয়

ঘুম ফিরে পেতে শিশুকে কীভাবে সহায়তা করবেন?

অনেক বাবা-মা প্রতিদিন একটি প্রশ্নে আটকে যান—

“শিশুর ঘুম হচ্ছে না, কী করবো?”

“বাচ্চা রাতে বারবার জেগে ওঠে কেন?”

ঘুম না হওয়া শুধু ক্লান্তি বাড়ায় না, শিশুর মস্তিষ্ক, মন ও ইমিউনিটি—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে প্রভাব ফেলে। এই লেখায় সহজভাবে জেনে নিন:

– শিশুর ঘুম না হওয়ার কারণ

– বাস্তবসম্মত সমাধান

– এবং ঘুম ফেরানোর ঘরোয়া উপায়

১. শিশুর ঘুম না হওয়ার সাধারণ কারণ

শিশুর ঘুমের সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। নিচের যেকোনো বিষয় হতে পারে মূল কারণ:

  • ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় না থাকা
  • ঘুমের আগে অতিরিক্ত খেলাধুলা বা উত্তেজনা
  • মোবাইল বা টিভির স্ক্রিনে সময় কাটানো
  • পেটের গ্যাস বা হজমের সমস্যা
  • শারীরিক অস্বস্তি (ঠান্ডা, গরম, মশার কামড়)
  • আলাদা ঘরে ঘুমানোতে ভয় পাওয়া

সঠিক কারণ খুঁজে বের করাই প্রথম ধাপ।

২. শিশুর ঘুম ফেরাতে করণীয়

ঘুম ফেরাতে জটিল কিছু করতে হবে না—বরং নিচের সহজ অভ্যাসগুলো প্রতিদিন মেনে চললেই শিশুর ঘুম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে:

‌– ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পাড়ান এবং জাগান। শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেলে ঘুম স্বাভাবিক হয়।

– ঘুমের আগে শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন

ঘরের আলো কমিয়ে দিন, চুপচাপ পরিবেশ রাখুন। শিশুকে গল্প বলুন বা হালকা ঘুমপাড়ানি গান দিন।

– ঘুমের আগে মোবাইল/টিভি বন্ধ করুন

স্ক্রিন থেকে আসা আলো শিশুর মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে। ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে এসব বন্ধ করুন।

– হালকা ও সহজপাচ্য খাবার দিন

রাতের খাবার বেশি ভারী হলে হজমে সমস্যা হয়, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। খিচুড়ি, দুধ বা নরম ভাত উপযোগী।

– নিরাপদ ও আরামদায়ক ঘরের পরিবেশ

বিছানা, তাপমাত্রা, মশা-মাছি—সবকিছু শিশুর আরামের জন্য মানানসই করুন।

৩. কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

নিচের লক্ষণগুলো থাকলে শিশুকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া উচিত:

  • টানা কয়েক সপ্তাহ ঘুম না হওয়া
  • ঘুমের সময় ঘনঘন কেঁদে ওঠা
  • ঘুমের মাঝে দম আটকে আসা বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • দিনের বেলায় অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঝিমুনি

কখনও কখনও ঘুমের সমস্যা অন্য রোগের উপসর্গ হতে পারে।

৪. প্রশ্ন উত্তর:

প্রশ্ন: শিশুর ঘুম না হলে কী করা উচিত?

উত্তর: নির্দিষ্ট রুটিন, মোবাইল থেকে দূরে রাখা ও আরামদায়ক পরিবেশ শিশুর ঘুম ফেরাতে সহায়তা করে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

প্রশ্ন: ঘুম কম হলে শিশুর কী ক্ষতি হয়?

উত্তর: ঘুম কম হলে শিশুর ইমিউনিটি, মনোযোগ ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে।

উপসংহার: ধৈর্য আর নিয়মিত অভ্যাসেই ফিরবে শিশুর ঘুম

শিশুর ঘুম না হওয়া অভিভাবকদের জন্য চিন্তার বিষয় হলেও, তা বেশিরভাগ সময়েই ঠিক করা সম্ভব। প্রতিদিন একটু মনোযোগ, ভালো অভ্যাস এবং ভালোবাসা—এই তিনেই শিশুর ঘুম ফিরবে ধীরে ধীরে। আর সেই ঘুমই তৈরি করবে তার স্বাস্থ্যবান ও রোগমুক্ত ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related posts

বন্ধুত্ব, প্রেম ও কনফিউশন: বয়ঃসন্ধির মন বুঝে নিন

বন্ধুত্ব, প্রেম ও কনফিউশন: বয়ঃসন্ধির মন বুঝে নিন

কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্ক ও আবেগ নিয়ে বাবা-মার করণীয় “আমার মেয়েটা হঠাৎ করে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে…” “ছেলেটা সারাক্ষণ ফোনে কী করে বুঝতে পারি না…” বয়ঃসন্ধি বয়সে

How to Stay Healthy (সুস্থ থাকার উপায়) – শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য

How to Stay Healthy (সুস্থ থাকার উপায়) – শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য

সুস্থ থাকা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিতে হয়, কারণ দুটি মিলেই আমরা পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারি। আধুনিক

মাত্র ১৫ মিনিটে মন ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায়

মাত্র ১৫ মিনিটে মন ভালো রাখার ১০টি কার্যকর উপায়

🌿 ১. প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটান কাজের ফাঁকে বাইরে বের হয়ে কিছুক্ষণ প্রকৃতির কাছে থাকুন। সবুজ গাছপালা, রোদ আর খোলা হাওয়া মনকে দ্রুত প্রশান্ত করে।