শিশুর প্রস্রাব না হওয়া বা প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম হওয়া অনেক সময় গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এটি সাময়িক ডিহাইড্রেশন বা সাধারণ সংক্রমণের কারণে যেমন হতে পারে, তেমনি কিডনি ও মূত্রনালীর গঠনগত সমস্যা, স্নায়বিক জটিলতা বা অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রোগের লক্ষণও হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে কিডনি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।
প্রস্রাব কমে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণসমূহ
১. ডিহাইড্রেশন (Dehydration): শরীরে পানির ঘাটতির কারণে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এই অবস্থা শিশুরা অসুস্থ থাকলে বা পর্যাপ্ত তরল না পেলে আরও খারাপ হতে পারে।
২. মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI): মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, দুর্গন্ধ বা প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
৩. জন্মগত গঠনগত সমস্যা: যেমন – posterior urethral valve, ureterocele, বা vesicoureteral reflux, যা প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
৪. কিডনি সমস্যাসমূহ: কিডনির অকার্যকারিতা বা জন্মগত অস্বাভাবিকতা প্রস্রাব উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৫. নিউরোলজিকাল সমস্যা: মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের কিছু রোগ প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট করে।
লক্ষণ: কীভাবে বুঝবেন শিশুর প্রস্রাবে সমস্যা হচ্ছে?
- ৬ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া
- প্রস্রাবের সময় কান্না বা ব্যথা অনুভব করা
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, গাঢ় রং বা রক্ত থাকা
- শিশুর পেট ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি
- জ্বর, বমি, খাবারে অনীহা বা অতিরিক্ত ঘুমঘুম ভাব
- নবজাতকের ক্ষেত্রে প্রস্রাব না হওয়া কখনও কখনও জন্মগত বিপদের ইঙ্গিত
চিকিৎসা ও পরামর্শ
- প্রাথমিক পদক্ষেপ: শিশুকে পর্যাপ্ত তরল পান করানো, তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি খেয়াল রাখা।
- পরীক্ষা: ইউরিন রুটিন, কালচার, কিডনি ফাংশন টেস্ট, আল্ট্রাসাউন্ড বা রেডিওলজিক স্ক্যানের মাধ্যমে মূল কারণ নির্ধারণ করা হয়।
- চিকিৎসা পদ্ধতি: সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক, গঠনগত সমস্যা থাকলে প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার, এবং কিডনির জটিলতা থাকলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
কখন জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?
- ৬–১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া
- প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শিশুর পেট ফুলে যাওয়া
- বারবার ইউরিন ইনফেকশন হওয়া
- নবজাতকের জন্মের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হওয়া
- শিশুর আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেওয়া (অতিরিক্ত কান্না, খাওয়ার অরুচি)
সতর্কতা:
-
শিশুর প্রস্রাব ৬ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় না হলে অবহেলা করবেন না।
-
প্রস্রাবে ব্যথা, দুর্গন্ধ, গাঢ় রং বা রক্ত থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-
নবজাতক জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না করলে এটি জরুরি অবস্থা হতে পারে।
-
নিজে ওষুধ না দিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন।
-
পর্যাপ্ত তরল (বিশুদ্ধ পানি, দুধ ইত্যাদি) শিশুকে দিন, ডিহাইড্রেশন এড়াতে সতর্ক থাকুন।
প্রশ্নোত্তর বিভাগ
প্রস্রাব না হলে কী করণীয়?
প্রথমে শিশুকে বেশি তরল দিন। যদি ৬–১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চার দীর্ঘদিন প্রস্রাব না হলে কী হয়?
এটি কিডনি ক্ষতির ইঙ্গিত হতে পারে। চিকিৎসা না করলে কিডনি ফেইলিওর হতে পারে।
নবজাতকের প্রস্রাবের সমস্যার লক্ষণ কী কী?
কম প্রস্রাব, রঙ গাঢ় হওয়া, প্রস্রাবের সময় কান্না করা, জ্বর, বমি ইত্যাদি।
শিশুর প্রস্রাব হলুদ হওয়ার কারণ কী?
ডিহাইড্রেশন, খাদ্যাভ্যাস, জ্বর বা কিছু ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন। পানি খাওয়ানোর পরও যদি হলুদ থাকে, চিকিৎসা জরুরি।
নবজাতক শিশুর প্রস্রাব না হওয়ার কারণ:
জন্মগত ত্রুটি, ডিহাইড্রেশন, ইউরিনারি অবস্ট্রাকশন ইত্যাদি হতে পারে।
১ বছরের শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয়:
পর্যবেক্ষণ করুন এবং ৬ ঘণ্টার বেশি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
২ বছরের শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয়:
মূত্র সংক্রমণ বা গঠনগত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। ইউরিন টেস্ট ও স্ক্যান প্রয়োজন।
৯ মাসের শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয়:
হাইড্রেশন নিশ্চিত করুন। প্রস্রাব না হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
১৬ মাসের শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয়:
এটি সংক্রমণ, পাথর বা নিউরোলজিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। ডাক্তার দেখানো জরুরি।
১ মাসের শিশুর প্রস্রাব না হলে করণীয়:
জন্মগত গঠনগত ত্রুটি হতে পারে। এটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি—দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।