গ্রীষ্মকাল এলেই বাংলাদেশে তীব্র গরমের প্রকোপ বাড়ে, এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। শিশুরা দ্রুত পানিশূন্য হয় এবং তাপমাত্রার কারণে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই গ্রীষ্মে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। আসুন, জানি কীভাবে তীব্র গরমে শিশুর যত্ন নিতে হবে।
গ্রীষ্মে শিশুদের মধ্যে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা
গ্রীষ্মকালে শিশুদের মাঝে সাধারণত দেখা যায়:
- ডায়রিয়া ও বমি: তাপমাত্রা বেশি থাকলে শিশুরা ডায়রিয়া বা বমির সমস্যায় ভুগতে পারে।
- পানিশূন্যতা: তীব্র গরমে পানি কম খেলে শিশুর শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে, যা বেশী ঝুঁকির সৃষ্টি করে।
- হিট স্ট্রোক: অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- ত্বকের র্যাশ ও ঘামাচি: শিশুর ত্বক খুবই কোমল, এবং গরমে ঘামাচি ও র্যাশ হতে পারে।
- নিস্তেজতা ও খিঁচুনি: ঘামের পরিমাণ কম হলে বা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শিশুর মধ্যে খিঁচুনি বা নিস্তেজতা দেখা দিতে পারে।
শিশুদের পানিশূন্যতা: কেন বেশি হয়?
শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অধিকতর বিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করে, যার ফলে তাদের শরীর থেকে দ্রুত পানি এবং লবণ বের হয়ে যায়। পানিশূন্যতার সমস্যা হওয়ার অন্যতম কারণ হল শিশুরা নিজেদের পিপাসা বুঝতে পারে না এবং তারা সাধারণত ঠান্ডা পানীয় খেতে পছন্দ করে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গ্রীষ্মে শিশুর যত্নে করণীয়
- সঠিক পোশাক ও পরিবেশ
- শিশুকে ঢিলেঢালা, হালকা রঙের সুতি কাপড় পরান।
- বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাতা বা কভার ব্যবহার করুন, যেন রোদ সরাসরি না পড়ে।
- ঘরে এসি বা ফ্যান থাকলে ২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখুন, যাতে শিশু আরামদায়ক অনুভব করে।
- পানি ও খাবারের যত্ন
- প্রচুর পানি, ডাব, লেবুর শরবত বা ফলের রস দিন।
- ওরস্যালাইন খাওয়াতে পারেন, যাতে শরীরের ইলেকট্রোলাইটস বজায় থাকে।
- গ্রীষ্মকালীন খাবারে যেন পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার থাকে—যেমন খিচুড়ি, সেদ্ধ ডিম, দুধ-ভাত ইত্যাদি।
- ঘাম ও ত্বকের যত্ন
- শিশুর ঘাম বারবার মুছে দিন এবং ভিজে জামা পাল্টে দিন।
- গোসল করান দিনে অন্তত দুইবার, আর মাঝে মাঝে হাত-পা ধুয়ে দিন।
- ত্বকে র্যাশ বা ঘামাচি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- অভ্যন্তরীণ যত্ন
- ৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধু বুকের দুধ দিন।
- শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, যেন তারা সুস্থ থাকে।
- অতিরিক্ত ঘাম হলে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দিন।
শিশুদের জন্য সতর্কতা
গ্রীষ্মকালীন হিট স্ট্রোক শিশুদের জন্য বেশ বিপজ্জনক। যদি শিশু খুব নিস্তেজ হয়ে পড়ে, শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, বা খিঁচুনি শুরু হয়, তবে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
শিশুদের গ্রীষ্মকালে সুস্থ রাখতে সচেতনতা এবং সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট পদক্ষেপে আপনি আপনার সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন। গরমে সচেতন থাকুন এবং আপনার শিশুর সুস্থতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।
নবজাতক শিশুর যত্ন: প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: নবজাতক শিশুর যত্নে কি বিশেষ কিছু লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন?
উত্তর: নবজাতক শিশুর যত্নে বিশেষভাবে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ন। তাদের ত্বক অনেক কোমল হওয়ায় গরমের প্রভাবে শুষ্কতা, ঘামাচি বা র্যাশ হতে পারে। তাই প্রতিদিন তাদের পরিষ্কার রাখতে হবে, সঠিকভাবে ব্রেস্টফিডিং নিশ্চিত করতে হবে, এবং শিশুর ঘরের তাপমাত্রা শীতল রাখতে হবে। অযথা বাইরে বেরোতে না দেওয়া, এবং অতিরিক্ত গরম থেকে তাদের রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন ২: গ্রীষ্মে দুই মাসের শিশুর যত্ন কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: দুই মাসের শিশুর যত্নে, গ্রীষ্মে বিশেষভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সে শিশুর পিপাসা পূরণের জন্য বুকের দুধ সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি তাদের শরীরের জলশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। গরমে শিশুদের খুব বেশি ঘামলে, তাদের শরীর মুছে দিয়ে শীতল রাখতে হবে এবং বাইরে রোদে না নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
প্রশ্ন ৩: এক মাসের শিশুর যত্নে বিশেষ করে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
উত্তর: এক মাসের শিশুর যত্নে গ্রীষ্মকালে বেশ কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। তাদের জন্য খুব শীতল পরিবেশ প্রয়োজন, তাই এসি বা ফ্যানের তাপমাত্রা পর্যাপ্ত শীতল রাখুন। শিশুকে নিয়মিত ব্রেস্টফিডিং করান এবং কোনো অবস্থায়ও শিশুর শরীরে ঘাম জমে না যেতে দিন। বাইরে গেলে দীর্ঘসময় বেরোতে দেবেন না এবং তাপমাত্রা বাড়লে তা থেকে রক্ষা করুন।
প্রশ্ন ৪: গরমে শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কিছু নির্দিষ্ট পরামর্শ আছে?
উত্তর: গরমে শিশুর ত্বক খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাদের ত্বককে রক্ষা করার জন্য প্রথমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করান, এবং সাবান ব্যবহার করে তাদের ত্বক পরিষ্কার রাখুন। এছাড়া, শিশুর ত্বকের জন্য নরম ও অ্যালার্জি মুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা উচিত, যাতে ত্বক শুষ্ক না হয় এবং ঘামাচি বা র্যাশ না সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ৫: গরমে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো?
উত্তর: গরমে বাচ্চাদের জন্য এমন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত যা অ্যালার্জি মুক্ত, এবং ত্বককে শীতল ও নরম রাখে। ত্বকের জন্য অ্যালো ভেরা ক্রিম বা হাইপোঅ্যালার্জেনিক ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। এসব ক্রিম ত্বককে সতেজ রাখে এবং গরমের প্রভাবে হওয়া র্যাশ ও ঘামাচির ঝুঁকি কমায়।
প্রশ্ন ৬: গ্রীষ্মকালে শিশুর ত্বকের যত্নে কী ধরনের ক্রিম ব্যবহার করা উচিত?
উত্তর: গ্রীষ্মকালে শিশুর ত্বকের জন্য তেল বা ক্রিম খুবই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। ত্বক শীতল ও ময়েশ্চারাইজ রাখার জন্য অ্যালো ভেরা জেল বা কোকোনাট অয়েল সবচেয়ে ভালো। ত্বক শুষ্ক হলে এটি খুব কার্যকরী এবং শিশুর ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে। অতিরিক্ত গরমে তেলযুক্ত ক্রিম ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত, কারণ এটি ত্বকে অতিরিক্ত তেল জমাতে পারে।