“সিজারিয়ান শিশুরা বেশি বুদ্ধিমান হয়”—এমন ধারণা একটি প্রচলিত মিথ। শিশুর বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে জিনগত গুণাবলি, পুষ্টি, আয়োডিনের উপস্থিতি, এবং থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যের ওপর। স্বাভাবিক প্রসব বা সিজারিয়ান—উভয় ক্ষেত্রেই জন্ম পদ্ধতির সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করে।
বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জন্ম পদ্ধতির সম্পর্ক
“সিজারিয়ান শিশুরা বেশি বুদ্ধিমান হয়”—এমন একটি মিথ প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, সিজারিয়ান শিশুরা স্বাভাবিক প্রসবের ধাপ অতিক্রম না করায় তাদের মাথায় আঘাতের ঝুঁকি কম থাকে। ফলে তারা একটু বেশি বুদ্ধিমান হতে পারে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে?
চিকিৎসকদের অভিমত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান বলেছেন, “শিশুর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার জন্ম পদ্ধতির কোনো সম্পর্ক নেই। একটি শিশুর বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে গর্ভাবস্থায় মায়ের সঠিক পুষ্টি, আয়োডিন গ্রহণ, এবং জন্মের পর পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়ার ওপর।”
শিশুর বুদ্ধিমত্তার মূল কারণগুলো:
- জিনগত বৈশিষ্ট্য:
শিশুর বুদ্ধিমত্তা আংশিকভাবে জিনগতভাবে নির্ধারিত। - পুষ্টির ভূমিকা:
গর্ভাবস্থায় আয়োডিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। - থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্ব:
শিশুর জন্মের পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করানো উচিত। হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
সিজারিয়ান বনাম স্বাভাবিক প্রসব
সিজারিয়ান সেকশন মায়ের বা শিশুর স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়াতে একটি সহায়ক পদ্ধতি। তবে এটি স্বাভাবিক প্রসবের বিকল্প নয়। স্বাভাবিক প্রসবে মা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং প্রসব-পরবর্তী জটিলতা কম থাকে।
সিজারিয়ান কেন প্রয়োজন হতে পারে?
- মায়ের পূর্বের জটিলতার ইতিহাস।
- শিশুর শারীরিক অবস্থার জটিলতা।
- জরুরি ভিত্তিতে জীবন রক্ষার প্রয়োজন।
গুরুত্বপূর্ণ বার্তা:
- শিশু জন্মের পদ্ধতি যাই হোক, তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য সঠিক পুষ্টি এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
- সিজারিয়ান শিশুরা কি স্বাভাবিক প্রসবের শিশুদের চেয়ে বুদ্ধিমান?না, জন্ম পদ্ধতির সঙ্গে শিশুর বুদ্ধিমত্তার কোনো সম্পর্ক নেই।
- শিশুর বুদ্ধিমত্তা নির্ধারণে প্রধান কারণ কী?জিনগত বৈশিষ্ট্য, পুষ্টি, এবং থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য।
- গর্ভাবস্থায় মায়েদের কোন পুষ্টি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ?আয়োডিন, ফলিক অ্যাসিড, প্রোটিন, এবং আয়রন।
- সিজার করা কেন প্রয়োজন হয়?মায়ের বা শিশুর ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থা।
- স্বাভাবিক প্রসব কেন উৎসাহিত করা হয়?এতে মা দ্রুত সুস্থ হন এবং জটিলতার ঝুঁকি কমে।
- থাইরয়েড হরমোন শিশুর জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?এটি মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কখন থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত?জন্মের পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে।
- পুষ্টিহীনতায় শিশুর কী ক্ষতি হতে পারে?মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
- স্বাভাবিক প্রসবের কী সুবিধা?প্রসব-পরবর্তী ব্যথা কম হয়, মা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
- সিজারিয়ানকে কীভাবে দেখা উচিত?এটি একটি সহায়ক পদ্ধতি, তবে স্বাভাবিক প্রসবের বিকল্প নয়।
সতর্কতা
শিশুর জন্ম পদ্ধতি সম্পর্কে ভুল ধারণা থেকে বিরত থাকুন। বুদ্ধিমত্তার জন্য সঠিক পুষ্টি ও চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক প্রসব বা সিজারিয়ান—উভয় ক্ষেত্রেই শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। জন্মের পর শিশুর থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করানো অত্যাবশ্যক।