আজল (সহবাসের সময় বীর্যপাতের আগেই বিচ্ছিন্ন হওয়া) ইসলামে একটি প্রাচীন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে অনুমোদিত। তবে এটি ব্যবহারের নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। অভাব, কন্যাসন্তান জন্মানোর ভয় বা শারীরিক সৌন্দর্য বজায় রাখার মতো কারণের জন্য আজল করা অনুচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সাময়িক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
আজল কী?
আজল একটি প্রাচীন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেখানে সহবাসের সময় বীর্যপাত যোনির বাইরে করা হয়। এটি ইসলামের যুগেও ব্যবহৃত হতো এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময়ে সাহাবীগণ এ পদ্ধতি অনুসরণ করতেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে আজলের বৈধতা
ইসলামের দৃষ্টিতে আজল বৈধ হলেও এর উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক কষ্ট, কন্যাসন্তান জন্মানোর ভয় বা অন্য অযৌক্তিক কারণে আজল করার অনুমোদন নেই। আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং রিজিকের মালিক আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়টি মনে রাখা জরুরি।
পবিত্র কুরআনের নির্দেশ:
“তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। তাদের এবং তোমাদের রিজিক আমি প্রদান করি।”
(সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৩১)
হাদিসের আলোকে:
জাবের (রা.) বলেন,
“আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সময় আজল করতাম।”
(সহীহ বুখারি, ২/৭৮৪)
আজল কেন সাময়িক পদ্ধতি?
আজল কোনো স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নয়। এটি সন্তান নেয়ার সময় বিলম্ব করার একটি উপায়। তবে, এটি নির্ভরযোগ্য নয় কারণ এর কার্যকারিতা সর্বদা নিশ্চিত নয়।
আজল করার অনুমতি রয়েছে কখন?
আজল বা অন্যান্য সাময়িক পদ্ধতি ইসলামিক শরীয়তের দৃষ্টিতে তখনই গ্রহণযোগ্য যখন:
- স্ত্রীর স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে।
- সন্তান ধারণে বিলম্ব করা চিকিৎসা বা পারিবারিক প্রয়োজন অনুযায়ী হয়।
- উভয় পক্ষের সম্মতি থাকে।
আজল কতটুকু কার্যকর?
আজল শতভাগ নিরাপদ নয়। বীর্যের সামান্য অংশ যোনিতে প্রবেশ করতে পারে, যা গর্ভধারণের কারণ হতে পারে। তাই এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি।
আজল এবং আধুনিক পদ্ধতি:
আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কনডম, পিল, ইনজেকশন ইত্যাদির ব্যবহার জনপ্রিয়। ইসলামে এগুলোও সাময়িক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য যদি সেগুলো শরীরের স্থায়ী ক্ষতি না করে।
কেন আজল করা উচিত নয় কিছু ক্ষেত্রে?
- অভাবের ভয়ে।
- অধিক সন্তান জন্মানোকে লজ্জার কারণ হিসেবে মনে করে।
- কন্যাসন্তানের ভয়ে।
ইসলামের নির্দেশিত অন্যান্য পদ্ধতি
- প্রাকৃতিক পদ্ধতি: মাসিক চক্রের সঠিক সময় জানার মাধ্যমে।
- সাময়িক পদ্ধতি: কনডম বা ওষুধ ব্যবহার।
- মেডিক্যাল পরামর্শ: স্বাস্থ্যগত কারণের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতি।
প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
১. আজল কী?
আজল হলো সহবাসের সময় বীর্যপাত যোনির বাইরে করা।
২. আজল কতটা কার্যকর?
আজল শতভাগ কার্যকর নয়। এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৩. আজল করা কি ইসলাম সমর্থন করে?
হ্যাঁ, তবে নির্দিষ্ট শর্তে। অযৌক্তিক কারণে এটি করা সমর্থনযোগ্য নয়।
৪. অভাবের কারণে আজল করা যাবে কি?
না। এটি আল্লাহর উপর বিশ্বাসের অভাবকে নির্দেশ করে।
৫. কনডম ব্যবহারে ইসলাম কী বলে?
কনডম ব্যবহার সাময়িক পদ্ধতি হিসেবে অনুমোদিত, যদি তা স্থায়ী ক্ষতি না করে।
৬. আজল করলে কি সন্তান ধারণ হয়?
হ্যাঁ, আজল শতভাগ নিরাপদ নয়। তাই গর্ভধারণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
৭. আজলের বিকল্প কী?
আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যেমন কনডম, পিল, ইত্যাদি।
৮. প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কী?
মাসিক চক্রের সঠিক সময় নির্ধারণ করে সহবাস।
৯. আজল ইসলামে কখন অনুমোদিত?
স্ত্রীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বা বৈধ পারিবারিক প্রয়োজন থাকলে।
১০. জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি কোনটি?
স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
সতর্কতা
ইসলামে আজল বা অন্যান্য পদ্ধতি নির্দিষ্ট শর্তে বৈধ। ভুল উদ্দেশ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা হারাম। আর্থিক সমস্যা বা সন্তানের লজ্জা থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। ইসলাম সবসময় সঠিক উদ্দেশ্য ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখার শিক্ষা দেয়।